
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে অনুষ্ঠিত কুম্ভ মেলায় পদদলনের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪০ জনে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার রাতে মৌনী অমাবস্যা উপলক্ষে পবিত্র স্নান করতে আসা লাখ লাখ পূণ্যার্থীর মধ্যে এই ঘটনা ঘটে। শোকাবহ এই দুর্ঘটনায় আরও অনেকে আহত হয়েছেন, তবে এখনও সরকারিভাবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানানো হয়, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় হাজার হাজার পূণ্যার্থী গঙ্গাস্নান করতে নদীর তীরে জড়ো হয়েছিলেন। পরদিন সূর্যোদয়ের আগেই তারা স্নান করতে এগিয়ে যান, কিন্তু ভিড়ের চাপে ঘটে মারাত্মক এই দুর্ঘটনা। উপাসকদের মধ্যে কেউ কেউ স্নান করার জন্য অগ্রসর হচ্ছিলেন, তখনই আচমকা ধাক্কায় উপাসকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় নদীর তীরে বসে থাকা মানুষের ওপর পড়েন অনেকেই এবং কিছুক্ষণের মধ্যে ভয়াবহ পদদলনের ঘটনা ঘটে।
প্রথমে ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও, হাসপাতালের মর্গে আরও ২৫টি মরদেহ আনা হয়। স্থানীয় হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাস্থলে থাকা এক চিকিৎসক বলেন, প্রাথমিকভাবে ১৫ জন নিহত হলেও পরে জানা গেছে, মৃতের সংখ্যা প্রায় ৪০ জনে পৌঁছেছে। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক, এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য স্থানীয় হাসপাতালে ভিড় করছে।
এ ঘটনায় কুম্ভ মেলার প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, ঘটনার সময় রাত ২টার দিকে ১২ ও ১৩ নম্বর সেক্টরের কাছে এই পদদলনের ঘটনা ঘটে। তবে এখনও পর্যন্ত দুর্ঘটনার কারণ জানা যায়নি। পুলিশ বাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছে, তবে ভিড়ের চাপে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, পদদলনের পর ঘটনাস্থলে ছড়িয়ে পড়েছিল মানুষের জামাকাপড়, জুতা, কম্বল ও ব্যাগ। সারা দৃশ্যটি ছিল ভয়াবহ, যেখানে মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ছোটাছুটি করছিল। এক প্রত্যক্ষদর্শী শ্বেতা ত্রিপাঠী বলেন, "আমরা দেখেছি মানুষ পড়ে যাচ্ছে, চারপাশে কাপড়, ব্যাগ ছড়িয়ে পড়েছিল। এমন ঘটনা এত দ্রুত ঘটেছিল যে আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি।"
প্রসঙ্গত, কুম্ভ মেলা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। প্রতি ১২ বছর পরপর কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয় এবং এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় জমায়েত হিসেবে পরিচিত। ১৪৪ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয় মহাকুম্ভ মেলা, যা প্রায় ৮০০ বছরের ঐতিহ্য বহন করে। এবারের কুম্ভ মেলায় ৪০ কোটি মানুষ অংশ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই মেলায় অংশগ্রহণকারী লাখ লাখ পূণ্যার্থী বিশ্বাস করেন, গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী নদীর সঙ্গমে স্নান করে তারা অশেষ পুণ্য লাভ করেন। তবে এই স্নান উৎসবের মাঝে অতিরিক্ত ভিড় ও বিশৃঙ্খলার কারণে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে, যা সবার হৃদয়ে গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে।