অনলাইন ডেস্ক : ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার হামলার শিকার হয়ে সম্পূর্ণভাবে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ভাঙচুরের ঘটনাটি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
বুধবার রাত আটটার দিকে ফেসবুকে ঘোষিত ‘বুলডোজার মিছিল’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ছাত্র-জনতা জড়ো হতে শুরু করে। রাত ১০টার দিকে বাড়িটিতে আগুন দেওয়া হয়। এরপর ক্রেন এবং এক্সকাভেটর দিয়ে বাড়িটির বিভিন্ন অংশ ভেঙে ফেলা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে বাড়ির সামনের অংশের তিন তলা পর্যন্ত অনেকটাই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। বাড়ির ভেতরে থাকা দরজা, জানালা, লোহা, স্টিলসহ নানা জিনিসপত্র ভাঙা এবং লুট করার দৃশ্যও দেখা গেছে।
সকাল ১০টার দিকে দেখা যায়, বাড়িটির পেছনের ছয়তলা ভবনটি ভাঙা হচ্ছে এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরও গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ সময় শত শত মানুষ বাড়ির ভেতরে ঢুকে নানা সামগ্রী নিয়ে বেরিয়ে আসছে। বাড়ির বিভিন্ন অংশে লাল কালি দিয়ে লেখা ছিল, ‘স্বৈরাচার সাবধান’।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী শফিক হাসান বলেন, "বাড়িটি পুরোপুরি ভাঙতে হবে। নাহলে ফ্যাসিবাদকে জিইয়ে রাখা হবে। আমরা এখানে স্বৈরাচারের চিহ্ন মুছে দিতে এসেছি।"
বিক্ষোভকারীরা "স্বৈরাচারের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও" এবং "দিল্লি না ঢাকা" স্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত করে তোলে। বৃহস্পতিবার "জয় বাংলা" স্লোগান দেওয়ায় এক মধ্যবয়সী নারীসহ দুইজনকে মারধর করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা নিরাপত্তার জন্য অন্যত্র সরে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বুধবার রাতে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়ার প্রতিবাদে এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে এই কর্মসূচি পরিচালিত হয়।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নীল আহমেদ বলেন, "যত বিভেদ থাকুক না কেন, হাসিনা এবং ফ্যাসিবাদ প্রশ্নে কোনো ছাড় নেই। এই বাড়ি ভেঙে আমরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান আরও শক্ত করেছি।"
শুধু ঢাকায় নয়, দেশের বিভিন্ন এলাকায়ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে:
-খুলনায়: ময়লাপোতা এলাকায় শেখ হাসিনার চাচার বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
-চট্টগ্রামে: চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও জামাল খান এলাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে।
-সিলেটে: জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
-রাজশাহীতে: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিবুর রহমান হলের নামফলক ভাঙচুর করা হয়েছে।
-রংপুরে: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কারমাইকেল কলেজে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও নামফলক ভাঙচুর করা হয়েছে।
-কুষ্টিয়ায়: আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২ নম্বর বাড়ি ভাঙচুরের এই ঘটনাটি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার এই অবস্থান কতটা টেকসই হবে এবং এর ফলাফল কী হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এই ঘটনার মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা আরও বেড়েছে।