ধর্ম ডেস্ক : আল্লাহভীতি মুমিনজীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ ও সৌন্দর্য। আল্লাহভীতি মানুষকে পাপাঁচার ও অপরাধ থেকে বিরত রাখে এবং আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতে উৎসাহিত করে। পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াত ও অসংখ্য হাদিসে মুমিনদের আল্লাহভীতি অর্জনে উৎসাহিত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারে সঙ্গে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত চুক্তি পূর্ণ করবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৪)
আল্লাহভীতি অর্জনের গুরুত্ব
মহান আল্লাহ মুমিনের অন্তরে তাঁর ভয় ধারণ করার নানামুখী পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। যেমন-
১. ভালো-মন্দের পার্থক্য নির্ণয় : আল্লাহভীরু মানুষকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করো তবে আল্লাহ তোমাদের ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য করার শক্তি দেবেন, তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন; আল্লাহ অতিশয় মঙ্গলময়।’
(সুরা : আনফাল, আয়াত : ২৯)
২. পুরস্কার লাভ : তাকওয়া বা আল্লাহভীতি মুমিনের জীবনকে সংযত করে। এই সংযত জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে আছে মহাপুরস্কার। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহর রাসুলের সম্মুখে নিজেদের কণ্ঠস্বর নিচু করে, আল্লাহ তাদের অন্তরকে তাকওয়ার জন্য পরীক্ষা করে নিয়েছেন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।’ (সুরা : হুজরাত, আয়াত : ৩)
৩. মর্যাদার মাপকাঠি : ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের মর্যাদার মাপকাঠি হলো আল্লাহভীতি। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তোমাদের বিভিন্ন শ্রেণি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যেন তোমরা নিজেদের চিনতে পারো। নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সেই আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত যে সবচেয়ে বেশি আল্লাহভীরু।’
(সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১৩)
আল্লাহভীতি অর্জনের মাধ্যম
প্রাজ্ঞ আলেমরা আল্লাহভীতি অর্জনের কিছু মাধ্যম বা উপায় বর্ণনা করেছেন। তার কয়েকটি হলো-
১. আল্লাহর বড়ত্ব নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা : মানুষ যখন আল্লাহর সত্তা, গুণাবলি, তাঁর সৃষ্টি, রাজত্ব, ক্ষমতা ও বড়ত্ব নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে তখন তার অন্তরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা আল্লাহর যথোচিত সম্মান করে না। কিয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুঠোয় এবং আকাশমণ্ডলী থাকবে ভাঁজ করা অবস্থায় তাঁর ডান হাতে। পবিত্র ও মহান তিনি, তারা যাকে শরিক করে তিনি তার ঊর্ধ্বে।’ (সুরা : ঝুমার, আয়াত : ৬৭)
২. জ্ঞান অর্জন করা : সঠিক জ্ঞান মানুষের ভেতরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি করে। এজন্য কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আলেমরাই আল্লাহকে বেশি ভয় করে।’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ২৮) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে আল্লাহভীরু এবং তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আল্লাহ সম্পর্কে জানি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০)
৩. নেক আমল করা : আমল অন্তরে আল্লাহর ভয় সঞ্চারে সহায়ক। আল্লাহ বলেন, ‘যারা সৎপথ অবলম্বন করে আল্লাহ তাদের সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করেন এবং তাদের মুত্তাকি হওয়ার শক্তিদান করেন।’ (সুরা : মুহাম্মদ, আয়াত : ১৭)
৪. কোরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা : কোরআন গবেষণার মাধ্যমে ব্যক্তি আল্লাহর পরিচয় জানতে পারে এবং এতে তার অন্তরে আল্লাহর ভয় জাগ্রত হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এক কল্যাণময় কিতাব, এটা আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ তাঁর আয়াতগুলো অনুধাবন করে এবং বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিরা গ্রহণ করে উপদেশ।’ (সুরা : সোয়াদ, আয়াত : ২৯)
৫. আল্লাহর শাস্তি স্মরণ করা : অবাধ্যদের জন্য আল্লাহ যে শাস্তির ঘোষণা দিয়েছেন সেগুলো স্মরণের মাধ্যমেও অন্তরে আল্লাহর ভয় জাগ্রত করা যায়। আল্লাহর শাস্তির ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়েছে, ‘তোমার প্রভুর শাস্তি তো অবশ্যম্ভাবী। এর কোনো প্রতিহতকারী নেই।’ (সুরা : তুর, আয়াত : ৭-৮) সর্বোপরি আল্লাহভীরু মানুষের সান্নিধ্য মানুষকে আল্লাহভীরু হতে সাহায্য করে। হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহ শপথ! যদি তুমি এমন মানুষের সঙ্গে মেশো, যারা তোমাকে দুনিয়ায় আল্লাহর ভয় দেখাবে। ফলে তুমি পরকালে নিরাপদ থাকবে-এটা উত্তম সেসব মানুষের সঙ্গে মেশার চেয়ে যারা তোমাকে দুনিয়ায় আশ্বস্ত করবে এবং তুমি পরকালে ভয়ের মধ্যে পরবে।’ (আল ইয়াকুতুল ফরিদিয়্যাহ, পৃষ্ঠা-২৮৮) আল্লাহ সবার অন্তরে তাঁর ভয় দান করুন। আমিন।