অনলাইন ডেস্ক : দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসের পর আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত আসে।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে মুক্ত হয়ে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সম্প্রতি, তারা পাঁচ দফা দাবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তাদের অভিযোগ অনুযায়ী তিনি দুর্ব্যবহার করেন। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব ও টেকনিক্যাল মোড়ে অবরোধ গড়ে তোলেন এবং পরবর্তীতে মিছিল নিয়ে প্রোভিসির বাসভবনের দিকে রওনা হন। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় এবং পুলিশের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে তিনি ঘোষণা দেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে মুক্ত হয়ে সাত কলেজ ‘সম্মানজনক পৃথকীকরণ’-এর আওতায় আসবে এবং ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে এই কলেজগুলো আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোয় পরিচালিত হবে।
পরবর্তীতে মঙ্গলবারের বৈঠকে শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে আলোচনা হয় এবং স্বরাষ্ট্র ও তথ্য উপদেষ্টারা তাদের আশ্বস্ত করেন যে,
১. সাত কলেজের পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
২. উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ সাত কলেজ সংশ্লিষ্ট কোনো কার্যক্রমে আর সম্পৃক্ত থাকবেন না।
৩. ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রাকিবের ওপর হামলার বিষয়ে তদন্ত করে তিন দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রবেশে কোনো বিধিনিষেধ থাকবে না।
বৈঠকের পর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি মঈনুল ইসলাম জানান, “আমাদের ছয় দফার একটি দাবি পূরণ করা হয়েছে এবং বাকিগুলো মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এসব দাবির বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণের জন্য আমরা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাব।”
ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন মৌ বলেন, “আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পাচ্ছি, এটি আমাদের আন্দোলনের বড় অর্জন। তবে সেশনজট নিরসনে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।”
অবশেষে, সব পক্ষের আশ্বাস ও সমঝোতার ভিত্তিতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের ঘোষিত কর্মসূচি—নিউ মার্কেট থানা ঘেরাও এবং সাত কলেজের সামনে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। তবে শিক্ষার্থীরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, দাবিগুলোর বাস্তবায়ন না হলে তারা আবারো আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন।