স্ট্যাফ রিপোর্টার: নয় বছরেও গাইবান্ধার তিন সাঁওতাল হত্যার বিচার হয়নি, বাস্তবায়িত হয়নি কোনো আশার বাণী। নির্যাতনের শিকার আদিবাসী সাঁওতালরা বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ এলাকায় ‘সাঁওতাল হত্যা দিবসে’ আয়োজিত বিশাল সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বরের ঘটনার করুণ কাহিনী উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, আহতরা উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে কেউ পঙ্গু, কেউ শরীরে গুলির স্প্রিন্টার নিয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় কর্মক্ষমতা হারিয়ে জীবন অতিবাহিত করছে। ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে নানা আশ্বাসের বাণী শোনালেও তার কোনোটিরই বাস্তবায়ন হয়নি আজও।
সমাবেশে সাঁওতাল হত্যার বিচার, আসামিদের গ্রেপ্তার, বাড়িঘরে লুটপাট, অগ্নিসংযোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতালদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানান বক্তারা।
এর আগে সকাল থেকে নানান আয়োজনে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল হত্যা দিবস পালিত হয়। সকালে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার জয়পুর গ্রামে নির্মিত অস্থায়ী শহীদবেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়। মাদারপুর ও জয়পুর গ্রাম থেকে কালো পতাকা, সাঁওতালদের ঐতিহ্য তীর-ধনুক, ব্যানার, বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ফেস্টুন নিয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে সমাবেশে মিলিত হয়।
সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, গোবিন্দগঞ্জ ও ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটি, ঢাকা এসব কর্মসূচির আয়োজন করে।
সাহেবগঞ্জ নিমতলা মোড়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি গণেশ মুরমু। এতে বক্তব্য দেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ ক্বাফী রতন, ভাসানী জনশক্তি পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, আদিবাসী ইউনিয়নের সভাপতি রেবেকা সরেন ও সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত মাহাতো, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রভাত টুডু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আহবায়ক আতোয়ারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শেখ নাসিরউদ্দিন মোল্লা, আদিবাসী নেতা রাফোয়েল হাসদা, কামিল হেমব্রম, সমাজকর্মী গোলাম রব্বানী মুসা প্রমুখ।
এদিকে, গাইবান্ধা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে সাঁওতাল হত্যা দিবসের আরেকটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সাহেবগঞ্জ- বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার কমিটির একাংশের সভাপতি ফিলিমন বাসকের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক খায়রুল কবির, এলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, আদিবাসী নেত্রী বিচিত্রা তিরকিত, গাইবান্ধা আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম বাবু, সমাজকর্মী মোর্শেদ হাসান দীপন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর সুগার মিল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা সাঁওতালদেরকে উচ্ছেদ করতে গেলে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের দফায় দফায় সংঘর্ষে ৩০ জন সাঁওতাল আহত হন। তাঁদের মধ্যে তিন- সাঁওতাল মঙ্গল মারডি, রমেশ টুডু ও শ্যামল হেমব্রম মারা যান।
মোঃ জিল্লুর রহমান গাইবান্ধা প্রতিনিধি।