অনলাইন ডেস্ক: বাজারে ব্রয়লার মুরগির দরপতন ঘটেছে। খামারিরা বাধ্য হচ্ছেন উৎপাদন খরচের তুলনায় কম দামে মুরগি বিক্রি করতে। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন এ খাতে বিনিয়োগকারী দেশের হাজার হাজার প্রান্তিক খামারি। তবে দুশ্চিন্তা নেই দেশীয় পোলট্রি শিল্পপ্রতিষ্ঠান কাজী ফার্মসের চুক্তিভিত্তিক খামারিদের (কন্ট্রাক্ট ফার্মার)। তারা জানিয়েছেন, কোম্পানি কম দামে মুরগি বিক্রি করলেও উৎপাদন বাবদ আমরা ভালো মুনাফা পাচ্ছি। অন্যদিকে নিজস্ব বিনিয়োগে ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনকারী ময়মনসিংহের প্রান্তিক খামারিরা বলেছেন, ‘বাজারদর বেশি হলে ভালো লাভ করা যায়, কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে চলমান দরপতনে বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হচ্ছে।’ ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকার খামারিরা জানান, নিজস্ব বিনিয়োগে খামার করতে স্থানীয় ডিলারদের কাছ থেকে সব সময়ই চড়া দরে বাচ্চা, খাবার ও ওষুধ কিনতে হয়। তার ওপর ব্রয়লারের বাজারদর যেভাবে কমছে, তা চলতে থাকলে মুরগির খামার চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
জেলার দত্ত পাকুটিয়ার মো. সেলিম বলেন, ১৪ বছর ধরে ডিলারের সঙ্গে খামার চালাই। কখনো লাভ, কখনো লোকসান হয়েছে। তবে লোকসানের অঙ্কই বড়। এভাবেই চলছিল বছরের পর বছর। সবকিছুর দাম বাড়ায় এখন প্রতি কেজি মুরগির উৎপাদন খরচ ১৪৪ টাকার ওপরে। গত কয়েক মাস ধরে খরচের চেয়েও কম দামে মুরগি বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ১১৮ টাকা দরে মুরগি বিক্রি করেছি। এ অবস্থা চলতে থাকলে খামার বন্ধ করে দিনমজুরের কাজ করা ছাড়া উপায় থাকবে না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই সব এলাকায় অনেক ক্ষুদ্র খামারি নিজস্ব বিনিয়োগ ছেড়ে কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিতে (কন্ট্রাক্ট ফার্মিং) মুরগি উৎপাদন করছেন। এর মধ্যে কাজী ফার্মসের চুক্তিভিত্তিক খামারিদের মুরগির বাজারদরের পরিবর্তে উৎপাদন পরিমাপের ভিত্তিতে মুনাফা (গ্রোয়িং চার্জ) দেওয়া হয়। বাজারে ব্রয়লারের দাম যতই কমুক, কোম্পানি তার দায় বহন করে খামারিদের বেশি উৎপাদনে বেশি লাভ দেয়। ফলে দাম কমলেও লোকসানের কোনো ভয় নেই চুক্তিভিত্তিক খামারিদের।
ফুলবাড়িয়ার দশমাইল বাজারের নারী উদ্যোক্তা আফরোজা খাতুন। নিজস্ব বিনিয়োগের খামার ব্যবসা ছেড়ে দুই বছর ধরে কাজী ফার্মসের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক মুরগি উৎপাদন করছেন তিনি। আফরোজা খাতুন বলেন, আগে নিজের বিনিয়োগে খামার করে অধিকাংশ সময় লোকসান হতো। স্বামীর টাকার ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। তবে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং শুরুর পর থেকে ৮০০ মুরগির খামারে যে ব্যাচে সবচেয়ে কম মুনাফা পেয়েছি, তাও ১৫ হাজার টাকা। জেলার অপর থানা ভালুকার ধলিয়া এলাকার তরুণ খামারি সাব্বির হোসেন জানান, লোকসান এড়িয়ে ঝুঁকিবিহীন খামার চালাতে সচেতন খামারিরা কোম্পানির সঙ্গে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ে যুক্ত হচ্ছেন। কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের এ শিক্ষার্থী বলেন, দুর্যোগ, মহামারি ও দরপতনের বাজারে খামারি হিসেবে নিজের সুরক্ষায় কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের চেয়ে উত্তম আর কিছু দেখছি না। কারণ কোম্পানি যে নীতিতে মুরগি উৎপাদন করায়, তাতে খামারিদের কখনোই লোকসানের দায় নিতে হয় না।
খামারের মুরগির ন্যায্য মূল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে সাব্বির জানান, বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লারের উৎপাদন ব্যয় হয় ১৪৪ টাকা। এর ওপর কৃষক, সরবরাহকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক মুনাফা যোগ করে বাজারদর নির্ধারণ করা জরুরি। চুক্তিভিত্তিক খামার পরিচালনা ব্যবসায় বিশেষজ্ঞ ও প্রাণিসম্পদ চিকিৎসক হাফিজুর রহমান বলেন, চুক্তিভিত্তিক পোলট্রি খামার ব্যবসায় ফিড কনভার্সন রেশিও (এফসিআর) পদ্ধতি খামারিদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক। চুক্তিভিত্তিক খামারে কেবল মুরগির উৎপাদন বাড়াতেই নয়, বরং খামারে স্বাস্থ্যবিধির কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে মুরগির মাংসের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে। যেখানে উৎপাদক ও ভোক্তাদের স্বার্থকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, ব্রয়লারের দাম কমে যাওয়ায় নিজস্ব বিনিয়োগের খামারিরা লোকসানে মুরগি বিক্রি করলেও কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ খামারিদের কোনো লোকসান নেই, বরং তারা উৎপাদন অনুযায়ী আকর্ষণীয় কমিশন পাচ্ছেন। মুরগির মানসম্মত বেশি উৎপাদন উৎসাহিত করতে কোম্পানি চুক্তিভিত্তিক খামারের জৈব-নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার এড়িয়ে চলতে প্রশিক্ষণ দেওয়ায় খামারিরা কোম্পানির প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন।
অন্যদিকে ব্যক্তি বিনিয়োগের খামারে অ্যান্টিবায়োটিকের অযাচিত ব্যবহার মুরগির উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়’ বলে জানান এই পোলট্রি খাত বিশেষজ্ঞ। এ প্রসঙ্গে কাজী ফার্মসের পরিচালক কাজী জাহিন হাসান বলেন, ব্যক্তি বিনোয়োগের প্রান্তিক খামারিদের স্থানীয় ডিলারের কাছ থেকে মুরগির বাচ্চা, খাবার ও ওষুধ কিনতে হয়। ডিলাররা নিছক নিজস্ব স্বার্থ বিবেচনায় অযাচিতভাবে খামারিদের বেশি বেশি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করেন। এতে প্রান্তিক খামারির মুরগির উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়। কিন্তু চুক্তিভিত্তিক খামারিদের (কন্ট্রাক্ট ফার্মার) সরাসরি কোম্পানি থেকে সুস্থ বাচ্চা, উন্নতমানের খাবার এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হয়। এসব খামারে অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির সুযোগ না থাকায় বাড়তি ব্যয় নেই, ফলে আমাদের খামারিরা তুলনামূলক কম খরচে মুরগি উৎপাদন করতে পারেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।