Logo
আজঃ রবিবার ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
শিরোনাম
আলাস্কায় নিখোঁজ উড়োজাহাজের সবাই নিহত! লস অ্যাঞ্জেলসের ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের ‘নীলচক্র’ সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে বিতর্কিত মাদ্রিদ ডার্বি সাবেক সিইসি আবদুর রউফের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সোনালি কাবিন পদক ঘোষণা ও কবি আল মাহমুদ স্মরণোৎসব বিষয়ে মতবিনিময় সভা শেরপুরে র‌্যাবের হাতে হেরোইনসহ আটক- ১ আজ থেকে সারাদেশে চলবে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শেরপুরে সূর্যমুখী বাগানে ইভটিজিংয়ের ঘটনায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে লকি ফার্গুসনের উপস্থিতি অনিশ্চিত পরবর্তী যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুব বাজেভাবে হেরে যাবে: ইলন মাস্ক

জমজমাট ফুলের বাজার : শত কোটি টাকা বিক্রির লক্ষ্য

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | ৪২২জন দেখেছেন

Image

পহেলা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ আগামী দিনের অন্যান্য দিবসগুলোর বাজার ধরতে প্রস্তুত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালির ফুল চাষিরা। বিশেষ করে বসন্ত উৎসব ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের বাকি মাত্র এক দিন। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বাকি আছে মাত্র আর কয়েকটা দিন। তাই ফুল নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে চাষিদের।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পুরো গদখালি পানিসারা অঞ্চল সেজেছে ফুলের সাজে। চাষিদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিষ্ঠায় মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন জাতের ফুল। সামনে আসন্ন বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস ও মাতৃভাষা দিবসসহ অন্যান্য দিবসের বাজার ধরতেই এই প্রস্তুতি চাষিদের। ফুলের রাজধানী যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, পানিসারা ও এর আশপাশের এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গাঁদা, রড স্টিক, লিলিয়াম, জিপসি, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল।

চলতি মৌসুমে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ফুলের উৎপাদন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বসন্ত উৎসব, বিশ্ব ভালোবাসা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষাসহ অন্যান্য দিবসগুলোর বাজার সামনে রেখে তা পুষিয়ে নেয়ার আশা করছেন চাষিরা। উৎসব পর্যন্ত ফুল ধরে রাখতে, পোকার আক্রমণ ও পচন রোধে নিচ্ছেন পরিচর্যা। চাষিদের দাবি, চাহিদা থাকায় উৎসব এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ফুলের দাম বাড়বে এবং তারা লাভবান হবেন।

ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ইউনিয়নের সৈয়দপাড়ার ফুল চাষি পারভেজ বলেন, ‘আমি ৫ বিঘা গাঁদা ও ২ বিঘায় রজনিগন্ধা চাষ করেছি। ভালোবাসা দিবসে রজনীগন্ধা ও ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসে গাদা ফুল বিক্রি করব। এজন্য এখন ফুলের পরিচর্যা করছি। বিশেষ করে ফুল ধরে রাখতে এবং পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে ভিটামিন ও কীটনাশক ব্যবহার করছি। আশা করছি ভালো দামে ফুল বিক্রি করতে পারব।’

পানিসারা গ্রামের ফুল চাষি কুরবান আলী বলেন, ‘আমার ২ বিঘা ৪ কাটায় গোলাপ বাগান রয়েছে। আমার বাগানের গোলাপগুলো লংস্টিক এবং লাল, সাদা, হলুদ, কমলা ও গোলাপি রঙের। এ ধরনের ফুলের ভালোবাসা দিবসে বেশ চাহিদা থাকে।’ তিনি জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় উৎপাদন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছে এখন নতুন কুঁড়ি রয়েছে। এগুলো যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য ভিটামিন স্প্রে করা হচ্ছে। ভালোবাসা দিবসের আগেই ফুলের দাম বাড়বে।

কুরবান বলেন, ‘আশা করছি, এক একটি গোলাপের পাইকারি দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা করে পাব।’ পানিসারা গ্রামের আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমরা যারা ফুলের চাষ করি, তারা উৎসবকে ঘিরেই চাষ করি। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় উৎসব বসন্ত, ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি। এ কারণে আমরা পর্যাপ্ত ফুল মজুত করেছি। এখন প্রতিটি জারবেরা পাইকারি ৮/১০ টাকা দরে, গোলাপ ১৫/১৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু সামনে এসব ফুলের দাম তিনগুন হয়ে যাবে। কারণ এ বছর ভাইরাসের কারণে ফুল নষ্ট হয়েছে। এজন্য চাহিদার তুলনায় ফুলের যোগান কিছুটা কম।’

একই এলাকার ফুল চাষি ইসমাইল হোসেন বলেন, আসন্ন তিনটি দিবস সামনে রেখে বাকি অন্যান্য যে কয়টি দিবস আছে সেটাকে ঘিরে আমাদের প্রস্তুতি বেশ ভালো। গোলাপগুলো ক্যাপ পরিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়া নানা ধরনের ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে যাতে ফুল নষ্ট না হয়। এ বছর ফুলের ভালো দাম পাব, এমনটাই আশা করছি।

তিনি জানান, বর্তমানে গোলাপ প্রতি পিস ১৫-১৬ টাকা, জারবেরা প্রতি পিস ১০-১২ টাকা, গ্লাডিওলাস প্রতি পিস ১৫-১৭ টাকা, রজনীগন্ধা প্রতি পিস ১২টাকা, গাঁদা (প্রতি হাজার) ২০০-২৫০ টাকা, জিপসি প্রতি পিস ১০ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা (১০০ পিস) ৫০০ টাকা, চায়না গোলাপ (প্রতি পিস) ২৫-২৬ টাকা, ভুট্টা (প্রতি পিস) ১২ টাকা দরে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে ফুল চাষিদের নেতা যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমরা সারা বছর ফুল বিক্রি করলেও আমাদের মূল ব্যবসা হয় বেশকিছু উৎসব ঘিরে। ফুল সারা বছরই বিকিনিকি হয়। তবে উৎসবকে ঘিরে ফুলের চাহিদা বেশি থাকে এবং কৃষকরা সেই অনুযায়ী ফুল উৎপাদন ও পরিচর্যায় ব্যস্ত দিন পার করে থাকে। এ বছর বৈরি আবহাওয়ার কারণে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না।’

তবে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকে সামনের দিবসগুলোতে পানিসারা ও গদখালী অঞ্চল থেকে অন্তত শত কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আশাবাদী তিনি। আসন্ন সামনের তিনটি দিবসে প্রায় ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে তিনি মনে করেন। এছাড়াও বছরে প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার ফুল এ অঞ্চল থেকে বিক্রি হয় বলে তিনি জানান।

ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, এ বছর উপজেলার ৬৩০ হেক্টর জামিতে ফুলের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে গোলাপের চাষ হয়েছে বেশি। ১৫০ থেকে ২০০ হেক্টর জমিতে নানা রঙের গোলাপের চাষ হয়েছে। এ ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে লক্ষাধিক লোক জড়িত। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, যশোরে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়।

সারা বছর কমবেশি ফুল বিক্রি হলেও সাধারণত ১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ১ বৈশাখ ও ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ফুল বিক্রি হয় সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়াও রয়েছে ইংরেজি নববর্ষ, মহান শহীদ দিবস, বসন্ত ও বিশ্ব ভালোবাসা, মহান স্বাধীনতা দিবস ও বঙ্গবন্ধু শতবার্ষিকী। এই দিবসগুলোতে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও শুভেচ্ছা জানাতে অন্যতম অনুষঙ্গ তাজা ফুল। তাই শীত থেকে শুরু করে গ্রীষ্ম আসার আগ পর্যন্ত সময়টা ফুলের মৌসুম হিসেবে পরিচিত।

দেশের প্রথম বাণিজ্যিক ফুলের চাষের স্থান হিসেবে সুখ্যাতি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ও পানিসারা ইউনিয়নের। ১৯৮২ সালে শের আলী নামে একজন ফুল চাষি সর্বপ্রথম এ অঞ্চলে ফুলের চাষ শুরু করেন ।


আরও খবর



কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | হালনাগাদ:শনিবার ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | ২৫জন দেখেছেন

Image

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন মুখপাত্র হলেন নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান। তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বর্তমান মুখপাত্র হুসনে আরা শিখার স্থলাভিষিক্ত হন। বুধবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আরিফ হোসেন সহকারী পরিচালক পদে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদান করেন। তিনি মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, নটর ডেম কলেজে এইচএসসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সাইন্সে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি নিউপোর্ট ইউনিভার্সিটি ঢাকা ক্যাম্পাসে এমবিএ ডিগ্রি নেন।

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র পদ থেকে নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হককে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে সেখানে নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখাকে নিযুক্ত করা হয়। হুসনে আরা শিখা রাজশাহীতে বদলি হওয়ায় নতুন মুখপাত্র নিয়োগ দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।


আরও খবর

সাত মাসে রফতানি আয় বাড়লো ১১.৬৮ শতাংশ

সোমবার ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫




শিমার মেডিকেলে ভর্তি অনিশ্চিত

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ২৮ জানুয়ারী ২০২৫ | হালনাগাদ:রবিবার ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | ৫৭জন দেখেছেন

Image

খোরশেদ রনি : লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে মেধাবী শিক্ষার্থী শিমা আক্তার কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তবে অর্থের অভাবে তার ভর্তি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। দরিদ্র পরিবারের পক্ষে কোনোভাবেই তার ভর্তিসহ পড়ালেখার খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে শিমার ভর্তি নিয়ে শঙ্কার ঘটনাটি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নজরে এসেছে। সোমবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার মেধাবী শিমার মেডিকেলে ভর্তিতে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিসি।

শিমা কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের চরজাঙ্গালীয়া গ্রামের আলী আহমেদের মেয়ে। তারা ৬ ভাই-বোন। এর মধ্যে সে পরিবারের পঞ্চম সন্তান।

জানা গেছে, সীমা ২০২১ সালে চরকালকিনি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪ দশমিক ৮৯ পেয়ে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। ভাড়ার অভাবে নিয়মিত কলেজ যেতে পারত না সে। এরপরও ২০২৩ সালে সে জিপিএ ৪ দশমিক ৮৩ পেয়ে এইচএসসি পাস করে। এরপর সে মেডিকেলে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নেন।

তবে প্রথমবার কোথাও ভর্তি হতে পারেনি। তবে পুনরায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৪৩১৬তম স্থান অর্জন করে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে সুযোগ পায়।

শিমার মা আয়েশা বেগম বলেন, ‘পড়ালেখার প্রতি শিমার আগ্রহ বেশি। অনেক কষ্ট করে তার পড়ালেখার খরচ চালিয়ে এসেছি। অভাব-অনটনের মধ্যে তাকে মেডিকেলে ভর্তি করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’

শিমা আক্তার বলেন, ‘দারিদ্র্যকে জয় করা গুণীজনের জীবনী পড়ে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমি শুরু থেকেই মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন দেখেছি। প্রথমবার না পারলেও এবার আমি ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। আমার এ সাফল্যে আমার মা, ভাই ও শিক্ষকরা আমাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে। আমার স্বপ্ন পূরণে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’

চরকালকিনি আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মাহমুদুর রহমান বেলায়েত জানান, অভাবে শিমার পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। পরে বিদ্যালয়ের তার সব খরচ মওকুফ করা হয়েছিল। তবে সে মেধাবী শিক্ষার্থী। সামনে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার বলেন, ‘শিমা নামে এক ছাত্রী মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু আর্থিক কারণে তার ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে শুনেছি। তার ভর্তি নিশ্চিত করতে জেলা ও কমলনগর উপজেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।’


আরও খবর

শেরপুরে র‌্যাবের হাতে হেরোইনসহ আটক- ১

রবিবার ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫




দিনাজপুরে ভুট্টা চাষে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম, অধিক ফলনের সম্ভাবনা

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ২৮ জানুয়ারী ২০২৫ | হালনাগাদ:রবিবার ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | ৫৬জন দেখেছেন

Image

অনলাইন ডেস্ক: জেলার ১৩টি উপজেলায় এবার ভুট্টার চাষে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। শীতের প্রকোপ কম থাকা, সঠিক সময়ে বৃষ্টি এবং রৌদ্রের প্রখরতা না থাকায় ভুট্টার ফলন ভালো হওয়ার আশা করছেন কৃষকেরা।

দিনাজপুর আঞ্চলিক কৃষি অধিদপ্তরের ভুট্টা চাষ নিয়ে গবেষণায় নিয়োজিত সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ নুরুল হুদা আজ মঙ্গলবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, চলতি বছর রবি মৌসুমে জেলার ১৩ টি উপজেলায় ৭৫ হাজার ৭৫২ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১১ দশমিক ৯৯ মেট্রিক টন ভুট্টা। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৯ লক্ষ ৮ হাজার ২৬৬ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা নির্ধারণ করা হয়।

কৃষি বিভাগের সূত্রটি জানায়, এবারে জেলায় অনুকূল আবহাওয়া ও সুস্থ পরিবেশ চলমান থাকায় জেলা ৩ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। এবারে রবি মৌসুমে মোট ৭৯ হাজার ৪০২ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ অর্জিত হয়েছে। ফলে অতিরিক্ত ফলল উৎপাদন হবে ৪৩ হাজার ৭৬৩ দশমিক ৫ মেট্রিক টন ভুট্টা।

কৃষি বিভাগের সূত্রটি জানায়, গত বছর জেলায় ৭৫ হাজার ৭১৬ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছিল। গত বছরের তুলনায় এবারে ৩ হাজার ৬৮৬ হেক্টর বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে।

সূত্রটি জানায়, গত বছর জেলায় বাজারে প্রতি মণ কাঁচা ভুট্টা ৯'শত থেকে এক হাজার টাকা দরে কৃষকেরা বিক্রি করেছে। শুকনা ভুট্টা প্রতি মণ এক হাজার ২'শত থেকে এক হাজার ৪'শত টাকা পর্যন্ত কৃষকেরা বিক্রি করেছে। গত বছর ভুট্টার ভালো ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় জেলায় ভুট্টার আবাদ বেড়েছে ।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান মিয়া বলেছেন, তিনি গত কয়েক দিন জেলার ১৩টি উপজেলার এবারে সরেজমিনে ভুট্টা চাষের বিষয় ঘুরে দেখেছেন। জেলার উঁচু জমিসহ নদীর ধারে চরগুলোতে ব্যাপক হারে কৃষকেরা ভুট্টা চাষ করেছে। জেলার নদীগুলোর দু'পাশে চরের  জমিতে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে ভুট্টার ক্ষেতের মনোরম দৃশ্য ফুটে উঠেছে।

তিনি বলেন কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মীদের পরামর্শে ভালো ফসল পেতে কৃষকরা ভুট্টা ক্ষেতের গাছের আগা ও পাতা ছেঁটে ফেলেছেন। যেন ভুট্টা গাছের ফলের গায়ে রোদের তাপ ভালো করে লাগতে পারে। এছাড়া ভুট্টা গাছের সব ধরনের পরিচর্যায় কৃষকেরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। সব মিলিয়ে এবার জেলায় ভুট্টার বাম্পার ফলন অর্জিত হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষি বিভাগের সূত্রটি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

দিনাজপুর জেলার সবচেয়ে দূরবর্তী ঘোড়াঘাট উপজেলার আদর্শ কৃষক শামসুর রহমান জিন্না (৬৭) বলেন, ভুট্টা চাষে লাভ বেশি টেনশন কম থাকে। ধান চাষ করলে ধান ক্ষেতে যত ধরনের বালাই আক্রমণ মোকাবেলা করতে হয় এবং ধান কাটা শ্রমিকের সংকটের পাশাপাশি মজুরি বেশি। তাই ভুট্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। ধানের চেয়ে ভুট্টা চাষে অনেক বেশি লাভ হচ্ছে। তিনি বলেন ভুট্টা পরিপক্ক হওয়ার পর জমি থেকে ভুট্টার মশা নিষ্কাশন করে আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে সহজে মাড়াই করা যায়। তাই প্রতি বছর ভুট্টা চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের।

দিনাজপুরে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভুট্টার আবাদ। গত ৫ বছরে জেলা শহরে গড়ে উঠা ৫টি ফিড মিল স্থাপন করা হয়েছে। ওই সব মিলগুলোতে চাহিদা বেড়েছে ভুট্টার। ফলে ভুট্টার চাহিদা বেড়ে যাওয়া ও ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা ভুট্টা আবাদে ঝুঁকেছেন ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ নুরুজ্জামান বলেন, সাধারণত নদীর ধারে পলিমিশ্রিত ঢালু জমি ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী। দীর্ঘদিন যে জমিগুলো অনাবাদি থাকত, কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে সেসব জমিগুলো চাষাবাদের আওতায় আনা হচ্ছে। তাছাড়া ভুট্টার আবাদ বাড়াতে সরকারি প্রণোদনা কার্যক্রমের আওতায় কৃষকদের কৃষি প্রণোদন দেওয়া হচ্ছে।

চলতি রবি মৌসুমে এ জেলায় সাড়ে ১২ হাজার কৃষককে ২ কেজি করে ভুট্টার বীজ ও ২০ কেজি ডিএফপি ১০ কেজি এমওপি রাসায়নিক সারসহ প্রতিজন কৃষককে ৩০ কেজি করে সার সরবরাহ করা হয়েছে। সরকারি প্রণোদনায় এসব কৃষক ৫০ শতক জমিতে ভুট্টা চাষ করতে পারছেন। ফলে কৃষি বিভাগের প্রণোদনায় কৃষকরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।  

সূত্র : বাসস


আরও খবর



ULAB’s HULT PRIZE: Record-Breaking Year of Student Engagement and Innovation

প্রকাশিত:শনিবার ১৮ জানুয়ারী ২০২৫ | হালনাগাদ:শনিবার ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | ১১০জন দেখেছেন

Image

Md. Mehedi Hasan :  University of Liberal Arts Bangladesh (ULAB) celebrates its fifth consecutive year hosting the prestigious HULT PRIZE, witnessing unprecedented student engagement. The application deadline, which closed on January 10, marked a milestone with 457 students forming 155 teams, making this edition the largest in ULAB’s history.


Renowned for its achievements, ULAB’s HULT PRIZE has earned the “Program of the Year” award for Central and South Asia and ranked fourth globally on the HULT PRIZE Billboard in 2022. This year’s theme, ‘UNLIMITED,’ challenges participants to develop innovative solutions addressing global issues through social ventures.

The overwhelming response highlights the growing entrepreneurial spirit within the ULAB community. ULAB looks forward to the groundbreaking ideas and transformative projects that will emerge, reinforcing its commitment to fostering positive societal impact.


আরও খবর



স্ত্রীর দেনমোহর নিয়ে ইসলামে যা বলে

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ১৬ জানুয়ারী ২০২৫ | হালনাগাদ:শনিবার ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | ৫২জন দেখেছেন

Image

ধর্ম ডেস্ক:  মহর হল বিয়ের মাধ্যমে নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের খাতিরে ইসলাম স্বামীর ওপর যে আর্থিক জিম্মাদারী আরোপ করেছেন তারই নাম দেনমোহর। দেনমোহরের মাধ্যমেই বিবাহ পূর্ণাঙ্গ ও বৈধ হয়। প্রাচীন আরবে যৌতুক দেয়ার প্রথা চালু ছিল, নবুয়াত প্রাপ্তির পর মোহাম্মদ (সা.) এই মোহর আদায় করা স্বামীর অবশ্য পালনীয় কর্তব্য এবং বিয়েতে স্ত্রীর জন্য মোহর নির্ধারণ এবং তাতে নারীর পূর্ণ মালিকানা প্রদান ইসলামি বিধানের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। দেনমোহর বিবাহের সাথে সম্পৃক্ত এক গুরুত্বপূর্ণ হক বা অধিকার। দেনমোহর নারীদের অস্তিত্বের বিনিময় নয়। বরং মানবতা রক্ষার্থে দেনমোহর আদায় করা হয়ে থাকে। কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন আয়াতে দেনমোহরের কথা উল্লেখ রয়েছে। দেনমোহর বিবাহ শুদ্ধ হওয়ার জন্য আবশ্যকীয় করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন:

হে নবী! আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি, যাদের আপনি মোহরানা প্রদান করেন।’ (সুরা আহযাব : আয়াত ৫০)

‘আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৪) হযরত আয়শা রা. নিহলার তরজমা ফারিজাহ করেছেন। আরেক জন প্রসিদ্ধ ভাষাবিদ বলেন, আরবী ভাষাতে শব্দটি ওয়াজিবের অর্থে ব্যবহৃত হয়। এজন্য দেনমোহর ধার্য্য করা এবং তা আদায় করা ওয়াজিব। যদি কেউ দেনমোহর না দেওয়ার শর্তে বিবাহ করে তারপরও মোহরে মিসল (পারিবারিক দেনমোহর) দেওয়া ওয়াজিব হবে। ইমাম মালেক রহ. এর নিকট তো এমন অবস্থায় বিবাহই সংঘঠিত হবে না।

দেনমোহরের পরিমাণ

দেনমোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ দশ দিরহাম। যদি কেউ তার চেয়ে কম দেনমোহর নির্ধারন করে তাহলে তা ধর্তব্য হবে না; বরং দশ দেরহাম ওয়াজিব হবে। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন: দশ দেরহামের চেয়ে কম দেনমোহর নেই। ১০ দিরহাম বর্তমান হিসাবে ৩০ গ্রাম ৬১৮ মিলি গ্রাম হয়। বর্তমান টাকার হিসাবে সর্বনিম্ন দেনমোহরের পরিমাণ ২ হাজার ৮৩৫ টাকা। যদি ১ তোলা রৌপ্যের মূল্য ১ হাজার ৫০ টাকা হয়, তাহলে ৩০ দশমিক ৬১৮ গ্রাম রৌপ্যের মূল্য ২ হাজার ৮৩৫ টাকা। ইমাম মালেক (রহ.) এর নিকট দেনমোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ এক চতুর্থাংশ দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) অথবা তিন দিরহাম খাটি রৌপ্যমুদ্রা। এক চতুর্থাংশ দিনার বর্তমান হিসাবে (প্রায় সাড়ে চার মাশা স্বর্ণ) এবং তিন দিরহাম। অর্থাৎ প্রায় ১১ গ্রাম। ইমাম মালেক (রহ.) কিছু হাদিসকে সামনে রেখেই এই মত পেশ করেছেন। ইমাম শাফেয়ী (রহ.) ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) এর নিকট দেনমোহরের কোনো সর্বনিম্ন পরিমাণ নেই। সর্বনিম্ন মূল্যবান জিনিসই তাদের নিকট দেনমোহর হতে পারে। তবে সর্বোচ্চ দেনমোহরের ক্ষেত্রে সকলেই একমত যে, তার কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ নেই। কেননা কুরআনুল কারীমে দেনমোহরের ক্ষেত্রে (ক্বিনতার) শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। যার অর্থ অনেক সম্পদ। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ১২ হাজার দিরহাম অথবা এক হাজার দিনারকে বলেছেন। সুতরাং নববী যামানা ও সাহাবিদের যামানাতে অনেক সময় অঢেল পরিমাণে দেনমোহর নির্ধারণ করা হতো। স্বয়ং নবী কারীম (সা.) এর পবিত্র স্ত্রীদের মধ্যে হযরত উম্মে হাবিবাহ (রা.) এর দেনমোহর চার হাজার দিরহাম ধার্য করা হয়েছিল, যা হাবশার বাদশাহ নাজাশী ধার্য করে নিজের পক্ষ থেকে তা আদায়ও করে দিয়ে ছিলেন। এ ব্যাপারে এক ঘটনা উল্লেখযোগ্য, আর তা হল: হযরত উমর রা. দেখলেন যে, লোকেরা আর্থিক স্বচ্ছলতার কারণে অধিক পরিমাণে দেনমোহর ধার্য করা শুরু করেছে, তাই তিনি মনে করলেন যে, দেনমোহরের একটা সর্বোচ্চ পরিমান ধার্য করে দেওয়া দরকার, আর তা ৪০০ দেরহামের চেয়ে বেশি হতে পারবে না। একথা তিনি মিম্বরে উঠে খুতবার মধ্যে উল্লেখ করেন। এরপর যখন তিনি খুতবাহ শেষে মিম্বর থেকে নেমে আসেন তখন এক কুরাইশী নারী বললেন: হে আমিরুল মু’মিনীন! আপনি এটা কিভাবে নির্ধারণ করলেন যে, ৪০০ দেরহামের বেশি দেনমোহর দেওয়া যাবে না? অথচ কুরআনে আল্লাহ তাআলা দেনমোহরের ব্যাপারে (ক্বিনতার) শব্দ উল্লেখ করেছেন, যার অর্থ প্রচুর পরিমাণ। অর্থাৎ তোমরা যত ইচ্ছা পারো দেনমোহর দাও। সুতরাং সেই অধিকারকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবেন না। হযরত উমর (রা.) এর মন নির্দিধায় সত্যকে গ্রহণ করার ছিল। সুতরাং ততক্ষণাৎ তিনি ইরশাদ ফরমান:

অনুবাদ: আল্লাহ আমাকে মাফ করেন, সকলেই উমরের চেয়ে বড় জ্ঞানী। অতপর তিনি পুনরায় মিম্বরে ওঠেন এবং ফরমান: হে লোকসকল! আমি তোমাদেরকে ৪০০ দেরহামের চেয়ে বেশি দেনমোহর দেওয়া থেকে মানা করেছিলাম, কিন্তু এখন তোমরা যত চাও তোমাদের সম্পদ থেকে দেনমোহর দিতে পার। আল্লাহ তাআলা যখন সাহাবায়ে কেরামকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল করেছিলেন এবং তাদের অবস্থা ভালো হয়ে গিয়েছিল তখন তারা অধিক পরিমাণে দেনমোহর ধার্য করতেন। স্বয়ং হযরত উমর (রা.) এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে, যখন তিনি হযরত আলী (রা.) এর কন্যা হযরত উম্মে কুলসুমকে বিবাহ করেন তখন চল্লিশ হাজার দিরহাম দেনমোহর হিসাবে ধার্য করেছিলেন। সম্ভবত তা নববী খান্দানের ইজ্জত এবং সম্মানের জন্য ছিল। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) এর ব্যাপারে প্রসিদ্ধ আছে যে, তিনি তার কন্যাদের দেনমোহর এক হাজার দিনার রাখতেন। পরে ১৫০০ দিনারের কথা উল্লেখ রয়েছে। হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) এক নারীকে বিশ হাজার দেনমোহরে বিবাহ করেছেন। হাদীসের শব্দে সাধারণভাবে বিশ হাজারের কথা উল্লেখ রয়েছে। সম্ভবত তার দ্বারা উদ্দ্যেশ্য বিশ হাজার দিরহাম। কিন্তু বেশির থেকে বেশি দেনমোহর রাখা শুধু লোক দেখানো এবং নিজের বড়ত্তের জন্য যেন না হয়, বরং সত্যিকার ভাবে তা স্ত্রীকে দেওয়ার ইচ্ছা থাকে এবং তা আদায় করার মত সামর্থও থাকে; তাহলে বেশি ধার্য করাতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থাতে দেনমোহর এত কম না হওয়া উচিৎ যার কোন গুরুত্বই থাকে না। আবার না এত বেশি পরিমাণ ধার্য করা উচিৎ যা আদায় করা কষ্টকর হয়ে যায় অথবা আদায় করার ইচ্ছাই না থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর পবিত্র স্ত্রীদের সাধারণত ৫০০ দিরহাম দেনমোহর ছিল। বেশি গ্রহণযোগ্য অভিমত হল, হযরত ফাতেমা (রা.) এর দেনমোহর ৫০০ দিরহাম ছিল। এজন্য এটাকে মোহরে ফাতেমী বলা হয়। কিছু উলামায়ে কেরাম লিখেছেন যে, ৫০০ দিরহামের বেশি দেনমোহর না হওয়া উচিৎ। ৫০০ দিরহাম বর্তমান বাজারের হিসাব হবে: ১ দিরহাম=৩ দশমিক ৯৭৫ গ্রাম। অতএব ৫০০ দিরহাম ১৪৮৭ দশমিক ৫০ গ্রাম। আমরা জানি, ১১.৩৩ গ্রাম-১ তোলা/ভরি। ১৪৮৭ দশমিক ৫০গ্রাম (৫০০দিরহাম)=১৪৮৭ দশমিক ৫০/১১ দশমিক ৩৩=১৩১ দশমিক ২৮ তোলা/ভরি। সুতরাং বর্তমান বাজারে প্রতি তোলা রুপা ১১০০ টাকা হলে, মোহরে ফাতেমী (১৩১ দশমিক ২৮ তোলা/ভরির) মূল্য হবে= ১ লাখ ৪৪ হাজার ৩৭৮ টাকা। স্বর্ণ ও রৌপ্যের মাধ্যমে দেনমোহর দেনমোহর ধার্যের ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা উচিত। দেনমোহর এত কম পরিমাণ না হওয়া উচিৎ যার কোন মূল্যই বাকি থাকে না। আবার এত বেশি পরিমাণ হওয়া যাবে না যা স্বামীর জন্য আদায় করা অসম্ভব বা দুষ্কর হয়ে যায়। এজন্য ফুকাহায়ে কেরাম স্ত্রীর পরিবারের অন্য সদস্যদের দেনমোহরের পরিমাণটা সামনে রেখেছেন। অর্থাৎ নারীর পিতার খান্দানের মেয়েদের দেনমোহরের পরিমাণ খেয়াল রাখতে হবে। ফিকহি পরিভাষায় তাকে মোহরে মিসাল বলা হয়ে থাকে। মোহরে মিসাল দ্বারা শুধু পরিমাণ উদ্দ্যেশ নয়, বরং তার মূল্যমানও দেখা হবে। যেমন: বিশ বছর পূর্বে যদি ফুফুর দেনমোহর দশ হাজার টাকা হয়ে থাকে এজন্য বর্তমানেও তার ভাতিজিকে দশ হাজার টাকাই দেনমোহর ধার্য করা হলে তা ইনসাফপূর্ণ কাজ হবে না। কারণ বিশ বছর পূর্বে দশ হাজার টাকা দ্বারা প্রায় দুই ভরি স্বর্ণ ক্রয় করা যেত আর আজকের বাজারে দশ হাজার টাকা দ্বারা আধা ভরিও পাওয়া যাবে না। সুতরাং শুধু মাত্র টাকার পরিমাণ দেখলে হবে না বরং বাজার মূল্যও দেখতে হবে। দু:খের বিষয় হল, আমাদের সমাজে আজ-কাল দেনমোহরের ব্যাপারে অনেক বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি দেখা যায়। এখনো অনেক এলাকাতে ও খান্দানে মাত্র পাঁচ, দশ হাজার টাকা দেনমোহর হিসাবে ধার্য করা হয়ে থাকে। যা মোটেই ঠিক না। আবার অনেক এলাকা এবং খান্দানে লোক দেখানোর জন্য লাখ লাখ টাকা ধরা হয়ে থাকে এবং তা আদায় করার ইচ্ছাও রাখে না। আজকাল যেহেতু কারেন্সির মুল্যের মাঝে স্থিতিশিলতা নেই বরং দিন দিন শুধু চড়া হতে চলছে এবং বিশ বছর পূর্বে পাঁচ হাজার অথবা দশ হাজার টাকার মূল্যায়ন ছিল, কিন্তু আজ এ পরিমাণ টাকা দিয়ে একটি গরিব পরিবারও চলতে পারেনা এবং আমাদের দেশে এ পরিমাণ টাকা কোথাও দেনমোহর হিসাবে দেওয়ার রেওয়াজও নেই; সুতরাং এ পরিস্থিতিতে স্বর্ণ বা রৌপ্যের মাধ্যমে দেনমোহর ধার্য করাই উচিৎ হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর যামানাতে দিনার স্বর্ণের হতো এবং দিরহাম রৌপ্যের হতো। স্বর্ণ ও রৌপ্যের মূল্যের মাঝে এখনো স্থিরতা রয়েছে। ফলে তা নারীদের হকের ক্ষেত্রে ইনসাফের বিষয় হবে। উদাহরণ স্বরুপ, আজ যদি কারো দেনমোহর টাকার পরিবর্তে পাঁচ তোলা স্বর্ণ ধার্য করা হয়, (যার বাজার মূল্য হবে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা)। আর বিশ বছর পর যদি সেই দেনমোহর আদায় করতে চায় তাহলে তাকে সেই পাঁচ তোলা স্বর্ণই আদায় করতে হবে। তখন তার বাজার মূল্য আজকের মূল্য থেকে অনেক বেশি হওয়া সত্ত্বেও নারী তার ধার্যকৃত দেনমোহরের সেই পাঁচ তোলা স্বর্ণই পাবে। কিন্তু এর বিপরীত যদি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেনমোহর হিসাবে ধার্য করা হয়, তাহলে বিশ বছর পর যদি তা আদায় করতে চায় তাহলে তার উপর ২ লাখ ৫০ হাজার টাকাই আদায় করা ওয়াজিব হবে। অথচ যেই টাকা দ্বারা তখন দুই তোলা স্বর্ণ ক্রয় করা যেত, আজ সেই টাকা দ্বারা এক আনা স্বর্ণও পাওয়া যাবে না। ফলে নারী এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়াটাই নিশ্চিত এবং এটা তাদের সঙ্গে বেইনসাফি করা হবে। এক তো তাদের দেনমোহরকে সময়মত আদায় করা হয়নি, দ্বিতীয়ত যখন আদায় করতে যাচ্ছে তখন তার মূল্য আগের তুলনায় খুব কম। সুতরাং এ ব্যাপারে ‘ইসলামী ফিকহা একাডেমি ইন্ডিয়া’ ১৯৮৯ সালে এক ফিকহী সেমিনারের আয়োজন করে এবং নিম্নের বিষয়গুলো পাশ করা হয়: দেনমোহর স্বর্ণ এবং রৌপ্যের মাধ্যমে দেওয়া উচিৎ, যাতে করে নারীদের হকসমূহ পরিপূর্ণভাবে আদায় হয় এবং মুদ্রার মূল্যের ঘাটতির কারণে যেন নারীদের হকসমূহ নষ্ট না করা হয়। 

দেনমোহর-স্বামীর কাছে এক প্রকার ঋণ

এ কথা মনে রাখা দরকার যে, দেনমোহরও স্বামীর উপর অন্যান্য ঋণের ন্যায় এক প্রকার ঋণ। এজন্য সঠিক নিয়ম হল, বিবাহের সময়ই দেনমোহর আদায় করা। সাহাবায়ে কেরাম এবং পরবর্তী যামানাতে বিবাহের সময়ই দেনমোহর আদায় করার প্রচলন ছিল। যদি পুরা দেনমোহর আদায় না করতে পারত তারপরও বিবাহের সময় কিছু দেনমোহর আদায় করত। এ বিষয়টি আরবের ইসলামী সমাজে এত মজবুত ভাবে পালনীয় ছিল যে, ফুকাহায়ে কেরাম লিখেছেন: যদি কোন নারীর বিবাহ হওয়ার পর এমন দাবী করে যে, আমার স্বামীর সাথে মিলন হয়েছে কিন্তু সে দেনমোহর আদায় করেনি, তাহলে তার এ দাবিটি বিশ্বাসযোগ্য ছিলনা। কারণ তা সমাজ ও পরিবেশে প্রচলিত আমলের বিপরিত ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবসত আমাদের এই উপমহাদেশে (ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে) বিবাহের সময় দেনমোহর আদায় করার কোন প্রচলন নেই। এখনতো অবস্থা এতোই খারাপ যে, যদি কেউ বিবাহের সময় দেনমোহর আদায় করে তাহেল সবাই মনে করে যে, স্বামীর মনে হয় তালাক দেওয়ার ইচ্ছা আছে!।

দেনমোহর আদায় করার নিয়ত যদি না থাকে

অনেক সময়তো দেনমোহর আদায় করার নিয়তই থাকে না। শুধু নামে মাত্র দেনমোহর ধার্য্য করা হয়ে থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন: যে বিবাহ করল এবং দেনমোহর শুধু ধার্য্য করল কিন্তু তার অন্তরে দেনমোহর আদায় করার নিয়ত নেই, তাহলে আল্লাহর দরবারে তাকে যিনাকারী হিসাবে গণ্য করা হবে। (নাউযুবিল্লাহ)

অন্য হাদিসে আছে যে, সে স্ত্রীর সাথে ধোকা বাজী করেছে, এজন্য সে কিয়ামতের দিন একজন যিনাকারী হয়ে উঠবে। কোন কোন স্বামী তার স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কারণে তাকে অনেক যুলুম নির্যাতন করতে থাকে, যাতে করে স্ত্রী নিজেই দেনমোহর মাফ করতে বাধ্য হয়ে নিজেই চলে যায়। এটা খুবই নিম্ন স্বভাবের ও কলঙ্কময় কাজ। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন: আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে খারাপ লোক ঐ ব্যক্তি, যে কোন নারীকে বিবাহ করে এবং তার প্রয়োজনকে পুরা করে তালাক দিয়ে দেয়, অথচ তার দেনমোহরও আদায় করে না। এজন্য পুরোপুরি ঋণ মনে করে বিবাহের সময়ই তা আদায় করার নিয়ত রাখা উচিৎ, কেননা যখন কোন ব্যক্তি তার ওপর ঋণকে আদায় করার নিয়ত করে তাহলে আল্লাহ তাআলা তার দিকে সাহায্যের হাতকে প্রসারিত করে দেন। খোদা না করুন, যদি তালাকের পরিস্থিতি সামনে আসে তাহলে দেনমোহর আদায় করা থেকে বাঁচার জন্য বাহানা খোঁজা ঠিক না। বরং দেনমোহর ছাড়া আরো কিছু অতিরিক্ত দিয়ে স্ত্রীকে সসম্মানে বিদায় দেওয়া উচিৎ। যাকে কুরআনে ‘মাতাউন’ বলা হয়েছে। ফুকাহায়ে কেরাম লিখেছেন যে, কোন নারী যদি তার স্বামীর কাছে খুলআ কামনা করে, আর তা স্বামীর যুলুম ও নির্যাতনের কারণে হয়ে থাকে, তাহলে সে অবস্থাতেও স্বামীর জন্য দেনমোহরকে মাফ করানোর বাহানা করা একটি অপছন্দনীয় কাজ। যদি নারীর ত্রুটির কারণে তালাকের পরিস্থিতি সামনে আসে, তাহলে দেনমোহর পরিমাণ ফেরত নেয়া অথবা মাফ করা জায়েজ আছে। এমনকি যদি দেনমোহর বিবাহের সময়ই আদায় করে থাকে তাহলে উত্তম হল সেই অবস্থাতেই রাখা। দেনমোহরের পরিমাণের চেয়ে বেশি আদায় করা মাকরুহ। 

ত্যাজ্য সম্পত্তি থেকে আগে দেনমোহর আদায় করা

যদি কোন কারণে স্বামী জীবদ্দশাতে দেনমোহর আদায় না করতে পারে, তাহলে অনেক এলাকাতে মৃত্যুর পর স্ত্রী থেকে দেনমোহরকে মাফ করানো হয়ে থাকে। কখনো এমন হয় যে, নারীর সামনে লাশ রেখে স্ত্রীকে জোরপূর্বক বলা হয়ে থাকে যে, তোমার প্রাপ্য দেনমোহরকে মাফ করে দাও। সেই সময় নারী অনেক দুঃখ এবং ভারাক্রান্ত অবস্থায় থাকে, এমন অবস্থায় যদিও মন থেকে মাফ করতে না চায় তারপরও লোকমুখে লজ্জা-শরমের কারনে মাফ না করে উপায় থাকেনা। এমনটা করা অনেক ঘৃণিত ও শরীয়তের খেলাফ কাজ। শরীয়তের উসূল বা পন্থা হল, যদি কোন ব্যক্তি ইন্তেকাল করে তাহলে প্রথমে তার ত্যাজ্য সম্পত্তি থেকে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এরপর ওয়ারিশদের মাঝে বন্টন করা হবে। সুতরাং যেমনিভাবে অন্যান্য ঋণ আদায় করা ওয়াজিব এবং তার ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হতে হবে, তেমনিভাবে দেনমোহরও এক প্রকার ঋণ এবং তার ব্যাপারেও আল্লাহর দরবারে জিজ্ঞাসিত হবে। এজন্য দেনমোহর মাফ করানোর কোন অর্থই হয় না। সুতরাং অন্যান্য ঋণের ন্যায় স্ত্রীর ঋণও পরিশোধ করতে হবে। এরপর যা অবশিষ্ঠ থাকবে তা ওয়ারিশদের মাঝে বন্টন করা হবে।


আরও খবর

জাহান্নামীরা দেখতে যেমন হবে

সোমবার ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫