কিছুতেই স্বস্তি ফিরছে না দেশের নিত্যপণ্যের বাজারে। যথারীতি এ সপ্তাহেও বাজারে বাড়তির দিকেই রয়েছে বেশিরভাগ পণ্য। নতুন করে অস্থিরতা বাড়ছে পেঁয়াজের বাজারে। এছাড়াও আগের চড়া দামে অপরিবর্তিত রয়েছে মাছ- মাংস, ডিমসহ অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলো।
এদিকে রমজানে দাম সহনীয় রাখতে ৪ পণ্যের আমদানি শুল্ক হ্রাসসহ বাজার ব্যবস্থা মনিটরিং আরও জোরালো করার ঘোষণা দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। শিগগিরই এসব পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হবে। যদিও এর আগে চিনি ও চালে শুল্কছাড় দেওয়া হলেও বাজারে তার কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। অন্যদিকে ভোজ্যতেল ব্যতীত গত এক বছরে কোনো পণ্যেরই নির্ধারিত দাম কার্যকর করা যায়নি। তবে ভোজ্যতেল আমদানিকারকরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ না মেনে এখন নিজেরাই দাম নির্ধার করে দিচ্ছে। ফলে চাল, চিনি ও তেলসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংশয় জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে নতুন করে অস্থিরতা বেড়েছে পেঁয়াজের বাজারে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ৩০ টাকা বেড়ে এদিন প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকার উপরে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন হালি পেঁয়াজ বাজারে না আসা পর্যন্ত দাম বাড়তির দিকেই থাকবে। তাদের হিসেবে মার্চের আগে বাজারে হালি পেঁয়াজের সরবরাহ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে ফেব্রুয়ারিজুড়েই বাড়তির দিকে থাকতে পারে এই মসলা পণ্যের দাম। যদিও গত ৫ মাস ধরে সংকট চলছে পেঁয়াজের বাজারে। বাজার বিশ্লেষণ করে ৬৫ টাকা দাম নির্ধারণ করা হলেও বাজারে ভোক্তাকে কিনতে হয়েছে ৫ গুণ বেশি দামে। এমনি মুড়িকাটা পেঁয়াজও এবার ৩ গুণ বেশি দামে বিক্রি হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত দুই সপ্তাহ ধরেই পেঁয়াজের পাইকারি বাজারে সরবরাহ সংকট চলছে ফলে খুচরায় দাম বাড়ছে। শ্যামবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মাজেদ জানান, ডলারের বাড়তি দামের কারণে অন্য দেশ থেকে আমদানি করলে প্রতি কেজিতে পেঁয়াজের দাম পড়ে যায় ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। এর সঙ্গে অন্যান্য খরচ ও মুনাফা হিসাব করলে ১০০ টাকার কাছাকাছি খরচ পড়ে যায়। মার্চে যেহেতু নতুন হালি পেঁয়াজ আসবে তাই আমদানিকারকদের বড় লোকসানের ভয়ে আমদানি কমেছে। তবে ভারত থেকে আমদানির সুযোগ পেলে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ আনতে আগ্রহী হবে। কিন্তু মার্চ পর্যন্ত আমদানি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়াও বাড়তিই রয়েছে ডিমের দাম। এদিনও প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে দেড়শ’ টাকা দরে। অন্যদিকে এ সপ্তাহে সবজির বাজারে দাম কিছু টাকা কমলেও গত বছরের তুলনায় এখনও দ্বিগুণ। সপ্তাহের ব্যবধানে ফুলকপিসহ কিছু সবজির দাম কমলেও বেশিরভাগ সবজি বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা দরে। কিছুটা কমে বেগুন ৮০, দেশি শিম ৬০, টমেটো জাতভেদে ৬০-৮০, শসা ৬০, করোল্লা ৯০, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
তবে গত সপ্তাহ থেকে বাজারে আলুর দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। এদিন প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা দরে। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কমেছে প্রায় ৩০ টাকা। এদিকে বাজারে এখনও প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকা দরে। একইভাবে গত সপ্তাহের চড়া দামে অপরিবর্তিত রয়েছে মসুর ডাল। প্রতি কেজি ছোট দানার মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়, ভালোমানের মুগ ডালের কেজি বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা দরে।
এছাড়াও গত সপ্তাহের দামে অপরিবর্তিত রয়েছে মাছের বাজারে। এদিন মাঝারি আকারের রুইয়ের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, বড় কাতল ৪শ’ টাকা, বড় পাঙাশ ২৫০ টাকা, চাষের কই (ছোট) ৩৩০ টাকা, তেলাপিয়া আড়াইশ’ টাকা ও শিং মাছ ৬শ’ টাকা, শোল মাছ ৮শ’ টাকা, পাবদা ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা, টেংরা মাছের কেজি আকারভেদে ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা, মলা মাছ ৫শ’ টাকা, বাইলা ১ হাজার টাকা, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪শ’ টাকা, মাঝারি আকারে বোয়াল ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা, গুঁড়ামাছ ৩শ’ টাকা, ছোট চিংড়ি ৫শ’ টাকা, গলদা ৭শ’ এবং বাগদা ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকা ও রূপচাঁদা ৯শ’ টাকা দরে।