লাইফস্টাইল ডেস্ক : বিস্ময়কর এক প্রাকৃতিক উপাদান মধু। যা এক প্রকার মিষ্টি ও ঘন তরল পদার্থ। মধু তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটিই সম্পন্ন করে মৌমাছি। বিভিন্ন ফুলের নির্যাস বা রস সংগ্রহ করে রহস্যময় প্রক্রিয়ায় মধু সৃষ্টি করে তারা।
পবিত্র কোরআন থেকে শুরু করে চিকিৎসা বিদ্যা- সবখানেই মধুর নানা উপকারিতার কথা উল্লেখ রয়েছে। অগণিত শারীরিক সমস্যার সমাধান রয়েছে এই প্রাকৃতিক পদার্থটিতে। মধুর কিন্তু বিভিন্ন নাম রয়েছে। রঙ, গঠন কিংবা উৎসের ওপর নির্ভর করে এর নাম করণ করা হয়। মধুর এমনই একটি প্রকার ‘ব্ল্যাক হানি’। বাংলায় যাকে কালো মধু বলতে পারেন।
মধু মাত্রই উপকারি। তবে তুলনার কথা আসলে সাধারণ মধুর চেয়ে কালো মধু কিছুটা এগিয়ে রয়েছে। স্বাদ, গঠন, রঙ, পুষ্টি উপাদান, স্বাস্থ্য উপকারিতার কারণে প্রতিনিয়ত এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। কালো মধু কেন সাধারণ মধুর চেয়ে বেশি উপকারি, জানুন এই প্রতিবেদনে-
মধুর উৎস ফুলের নির্যাস এ কথা আমাদের সবার জানা। বছরের একেক সময় একেক ফুল ফোটে। সময়ের ওপর এদের ধরনে পরিবর্তন আসে। মূলত ফুলের ধরনের ওপর নির্ভর করে মধুর রঙ কেমন হবে। এই যেমন সরিষা ফুলের মধু হালকা সোনালি রঙের। সেই তুলনায় কালোজিরা ফুলের মধু কালচে হয়ে থাকে।
কালো মধু কী?
যে মধুর রঙ গাঢ় বাদামি বা কালচে হয় তাকে কালো মধু বলা হয়। সাধারণ মধুর তুলনায় এর ঘনত্ব হয় বেশি, রঙও গাঢ়। একারণে এই মধুকে অনেকে ডার্ক হানি বা গাঢ় মধু নামেও চেনেন। প্রশ্ন থাকতে পারে, এই মধুর রঙ কালো বা বাদামী হয় কেন? কারণ যে সব ফুলের পরাগ গাঢ় বা কালচে রঙের, সে সব ফুলের রস সংগ্রহ করেই এই বিশেষ মধু তৈরি হয়।
ব্ল্যাক হানির প্রকারভেদ?
ফুলের ওপর নির্ভর করে কালো মধুর নানা প্রকারভেদ রয়েছে। কিছু জনপ্রিয় কালো মধু হলো- ব্ল্যাকবাট, বাকউইট, মেনুকা, জাররাহ, থাইম, চেস্টনাট, ড্যান্ডেলিয়ন, মেডো ইত্যাদি। প্রতিটি ধরনেরই রয়েছে আলাদা বিশেষত্ব। এই যেমন, মেনুকা হানি। নিউজিল্যান্ডের মেনুকা গাছের ফুলের নির্যাস বা রস সংগ্রহ করে মৌমাছিরা এই মধু তৈরি করে, এছাড়াও আফ্রিকার বিভিন্ন রেইন ফরেস্ট গুলোতে অতি উচ্চ মানের কিছু কালো মধু পাওয়া যায়। এতে সাধারণ মধুর সব পুষ্টি উপাদান তো রয়েছেই, বাড়তি পাওনা হিসেবে আছে ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড। যা অন্য মধুতে নেই।
কালো মধু আর সাধারণ মধুর মধ্যে পার্থক্য কী?
সাধারণ মধু আর কালো মধু তৈরি প্রণালি, সংগ্রহের উপায় সবটাই এক। সব মধুই মৌমাছিরা ফুল থেকে আহরণ করে এবং মৌচাকে জমায়। আর মৌচাক থেকে তা মানুষ সংগ্রহ করে। তাহলে এই দুটোর মধ্যে পার্থক্য কোথায়? কোনটির পুষ্টি গুণই বা বেশি?
সাধারণ মধু আর কালো মধুর বাহ্যিক পার্থক্য রঙে আর ঘনত্বে। কালো মধু তুলনা মূলক কালচে হয়। এতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম হওয়ায় ঘনত্ব আর পুষ্টি দুটোই সাধারণ মধুর থেকে বেশি থাকে। গবেষণা অনুযায়ী, বাকউইট ফুলের মধুতে সাধারণ মধুর তুলনায় ২০ গুণ বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। কালো মধুতে প্রচুর ফ্রুক্টোজ থাকে। মিষ্টির তীব্রতা সাধারণ মধুর তুলনায় বেশি হওয়ায় অল্প পরিমাণেই বেশি মিষ্টতা মেলে।
আমরা দোকান থেকে যে মধু কিনি তার বেশির ভাগই মৌচাক থেকে সংগ্রহ করার পর পাস্তুরায়ন করা হয়। খাঁটি মধুতে প্রিবায়োটিক, প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ (পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম) এবং ভিটামিন (বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬ এবং সি) সহ ১৮০টির বেশি পদার্থ রয়েছে। এই উপকারি যৌগ গুলোর বেশির ভাগই পাস্তুরাইজেশনের সময় তাপে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে, নির্দিষ্ট ফুলের মধু থেকে সৃষ্ট কালো মধু সতর্কতার সঙ্গে সংগ্রহ করে সরাসরি গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো হয়। ফলে পুষ্টি উপাদান গুলো অক্ষুণ্ণ থাকে।
কালো মধু রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। তারুণ্য ধরে রাখতে এর বিকল্প নেই। এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই বিভিন্ন রোগের সঙ্গে শরীর সহজে লড়াই করতে পারে।
দুই ধরনের মধুই উপকারি। কোনটি খাবেন সেই সিদ্ধান্ত আপনার। সাধারণ চা বা অন্য পানীয়তে চিনির বদলে মিষ্টি কিছু খেতে চাইলে বেছে নিতে পারেন হালকা বা সাধারণ মধু। আর আপনি যদি সুস্বাস্থ্যের জন্য বেশি পুষ্টিকর কিছু খেতে চান তবে কালো মধু খান। মজবুত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মিলবে এতে।
ব্ল্যাক হানি বা কালো মধু পাবেন কোথায়?
ভেজালের ভিড়ে খাঁটি মধু খুঁজে পাওয়াটাই কঠিন। সে ক্ষেত্রে কালো মধুর খোঁজ মেলা আরও জটিল বটে। তবে ইন্টারনেটের কল্যাণে বর্তমানে আমাদের দেশে এই মধুর চাহিদা বেড়েছে। গ্রাহকের চাহিদা বিবেচনায় কিছু বিদেশি ব্র্যান্ড দেশের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, সুপার স্টোর, ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স সাইট ব্ল্যাক হানি এনেছে। এছাড়া দেশের প্রথম কোম্পানি হিসেবে অর্গানিক নিউট্রিশন লিমিটেড, ‘কারকুমা’ ব্র্যান্ড নামে অর্গানিক ব্ল্যাক হানি বাজার জাত করছে। এটি ইউএসডিএ অর্গানিক সার্টিফাইড। লেভেল ও উৎস দেখে পছন্দ মতো জায়গা থেকে ব্ল্যাক হানি কিনতে পারেন।